শরীয়তপুর প্রতিনিধি, সময়ের কণ্ঠস্বর: অবশেষে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী গৃহবধু। শনিবার বিকালে ভেদরগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়।
অভিযুক্ত ওই নেতার বিরুদ্ধে কৌশলে ফাঁদে ফেলে ছয় নারীকে ধর্ষণসহ ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলে দল থেকে গত ১৯ অক্টবোর বহিস্কার করা হয়। এ ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পরে গতকাল আরিফ হোসেন হাওলাদারকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এখনো ক্ষতিগ্রস্ত ওই নারীদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আপত্তিকর ছবির ছড়ানো হলেও এখনো এগুলো জব্দ করতে পারেনি পুলিশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো জব্দ করে অাইসিটি অাইনে মামলা করার দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।
গতকাল শরীয়তপুরে ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষনের ভিডিও স্থানীয়দের হাতে হাতে! শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার করে সময়ের কন্ঠস্বর। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।
এর আগে প্রকাশিত সংবাদ…
শরীয়তপুর প্রতিনিধি, সময়ের কণ্ঠস্বর: গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে প্রথমে এক গৃহবধূর ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে তাঁকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন। সেটাও গোপনে ভিডিও করেন ছাত্রলীগ নেতা। সেই ভিডিও এখন এলাকার মানুষের হাতে হাতে। এভাবে ফাঁদে ফেলে ছয়জন নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি হলেন, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন(২২)।
গত ১৫ অক্টোবর থেকে ধর্ষণের ভিডিওগুলো গ্রামের মানুষের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ। তিনি বলেন, ‘আরিফ এমন চরিত্রহীন, ভয়ংকর মানুষ, এটা আমাদের জানা ছিল না। তিনি একাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করে ভিডিও ধারণ করার মাধ্যমে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই এলাকায় যাই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিই। আর আরিফ হোসেনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আরিফ স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। ২০১৫ সালের জুন মাসে তাঁকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
লোকলজ্জার ভয়ে এসব নারী এ ঘটনায় কোনো মামলা করেননি। তাঁদের মধ্যে একজন প্রবাসীর স্ত্রী। তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেক গৃহবধূ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। ঘটনার শিকার ২ কলেজছাত্রী লোকলজ্জায় কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ধষর্নের শিকার অারেক গৃহবধূর বোন অভিযোগ করেন, আরিফ তাঁকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছেন। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আতঙ্কে ও লোকলজ্জার ভয়ে এখনো মামলা করেননি।
এক কলেজছাত্রী বলেন, আরিফ আমাকে শেষ করে দিয়েছে। এখন সমাজে কীভাবে মুখ দেখাব? মরে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই।
উপজেলা ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কারের পর আরিফ হোসেন এলাকা থেকে পালিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়ি গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন, তা ও পরিবারের সদস্যরা বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মুঠোফোনে আরিফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন। এরপর ফোন বন্ধ করে রাখেছেন।
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এ কাজ করতে পারেন না। আমি আরিফের বাবাকে নির্দেশ দিয়েছি তাঁকে হাজির করার জন্য। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের জানানো হয়েছে। তাঁকে পাওয়া গেলে সামাজিকভাবে বিচার করা হবে।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদি হাসান সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ না পাওয়া গেলে কীভাবে ব্যবস্থা নেব?
এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ভেদরগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তা বড় ধরনের সাইবার অপরাধ। পুলিশ ওই ছেলেকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। যেকোনো উপায়ে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে